ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

সুন্নাতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর বেরিয়ে আসছে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানা অনিয়মের চিত্র। যেকোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। সেই নিয়ম না মেনেই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এমতাবস্থায় সরেজমিন ঘুরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আজ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেশিশু আয়ানের মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালকের নেতৃত্বে সরেজমিনে গত ১০ জানুয়ারি পরিদর্শন করা হয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধনের জন্য কখনোই আবেদন করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনোরূপ নিবন্ধ ছাড়াই নির্মাণাধীন ভবনে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

এমতাবস্থায় মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অ্যাক্ট ১৯৮২ অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের আদেশ প্রদান করা হলো।

জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়ানকে সুন্নতে খতনা করাতে নিয়ে যায় তার পরিবার। ওই দিনই সকালে ডাক্তারদের পরামর্শে আয়ানকে অ্যানেসথিসিয়া দিয়ে খতনা করা হয়। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তার বাবা জোর করে অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢুকে দেখেন আয়ানকে সিপিআর (কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া) দেওয়া হচ্ছে। আর বুকের দুই পাশে ছিদ্র করা এবং বুকের ভেতরে পাইপ ঢুকানো। এরপর আয়ানের অবস্থা আরও গুরুতর হয়।

পরে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালের গাড়িতে করেই গুলশান-২ এ ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি রাত ১১ টা ২০ মিনিটে আয়ানকে ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। পরে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয় আয়নকে।

এ ঘটনায় থানায় মামলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত অভিযোগ দেন আয়নের বাবা শামীম আহমেদ। তার আগেই গণমাধ্যমের খবরে নিজে থেকে তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিবন্ধন না পাওয়ায় এমন ব্যবস্থা নিল সরকার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর